Reviews

আসমানের আঁধার by Tanjirul Islam

aadrita's review

Go to review page

4.0

বাংলায় লেখা ফ্যান্টাসীগুলোর প্রতি অন্যরকম এক্সাইটমেন্ট কাজ করে আমার। এই বইটাও তার ব্যাতিক্রম নয়। হার্ড ম্যাজিক সিস্টেমের এপিক ফ্যান্টাসী, সাথে ম্যাপ ও ইলাস্ট্রেশন যুক্ত করে লেখক বাংলা সাহিত্যে ফ্যান্টাসীর যে এক নতুন যাত্রা শুরু করলেন তার জন্য সাধুবাদ জানাই।

লেখনী বেশ সুখপাঠ্য। চমৎকার বর্ণনাভঙ্গি পড়ে দৃশ্যগুলো চোখের সামনে কল্পনা করা যাচ্ছিলো সুন্দরভাবে। লেখা নিয়ে একটাই অভিযোগ, সংলাপগুলো একটু দূর্বল মনে হয়েছে। ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং চমৎকার। এই বইয়ে মান্দুব দ্বীপ এবং অস্পৃশ্য জগতের মাধ্যমে পুরো দুনিয়ার বেশ ছোট একটা অংশ উঠে আসলেও আরো বিস্তৃত দুনিয়ার সংকেত দেওয়া আছে বইতে। তাম্বুলক্রিয়া নামক ম্যাজিক সিস্টেমটা বেশ জটিল এবং চমৎকার। এর মাধ্যমে রূপান্তর, স্থানান্তর, শমনসহ আরো অনেক কিছু করা যায়।

ইব্রারকে ঘিরেই পুরো বই আবর্তিত। তার জীবনের গল্প ভালোভাবে বলা আছে বইতে, তার সম্পর্কে অনেককিছুই জানা যায়। পার্শ্বচরিত্রগুলোকে আরেকটু ভালোভাবে জানতে পারলে মন্দ হতো না।

যে ম্যাপ আর ইলাস্ট্রেশন নিয়ে সবথেকে বেশি উত্তেজনা কাজ করছিলো সেগুলোই হতাশ করলো কিছুটা। চমৎকার ম্যাপ, কিন্তু সাথে লিজেন্ড না থাকায় পড়ার সময় ম্যাপ ঘুরে দেখে মেলানো যায়নি। ইলাস্ট্রেশনগুলো দুর্দান্ত তবে রাতের বন, জাহাজ, সাগরের চলমান নৌকার দৃশ্য কাহিনীতে বিশেষ কিছু যোগ করেনি। বরং ফ্যান্টাসীর আরো কিছু উপাদান যেমন, তাম্বুলক্রিয়া, সাংকেতিক চিহ্ন বা অস্পৃশ্য জগতের দৃশ্যাবলি থাকলে বেশি উপভোগ করতাম।

পুরো বইটাই বেশ গতিশীল ছিলো। যেই মুহূর্তে যেয়ে গল্প সবচেয়ে আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে তখনই বইটা শেষ হয়ে যায়। এ কারণেই পরবর্তী পর্বের জন্য বেশ আগ্রহভরে অপেক্ষা করবো। সবমিলিয়ে ৭-৮ টা বইয়ের সিরিজের শুরু হিসাবে বেশ ভালো একটা বই আসমানের আঁধার।

ওহ, এতকিছুর মধ্যে দাবনিশের কথা ভাবছেন? পুরো সিরিজের নামকরণ হয়েছে যার নামে কী সেই বস্তু? বইটির শেষের দিকে খোঁজ পেয়ে যাবেন দাবনিশের।

musa's review

Go to review page

4.0

বাংলাদেশে ফ্যান্টাসি জনরাটা এখনো বাচ্চা। ঠাকু'মা'র ঝুলি থেকে শুরু করে যে রিচ একটা লোককথা এবং রূপকথার ভান্ডার আছে, সেটাকে বাদ দিয়ে হিসেব করলে অবশ্যই। তবে সেটাও দিব্যি বড় হয়ে যাচ্ছে দেখতে দেখতে। সম্প্রতি এই জনরায় 'আ ব্যাচ অব ফ্রেশ রাইটারস' এসে যোগ দিচ্ছেন, প্রত্যেকেই ভালোরকম প্রস্তুতি নিয়েই নামছেন এবার, আর এই সেকেন্ড এইজের শুরুর একটা বই বলা যেতে পারে 'দাবনিশ আখ্যান'কে।

যা আমাকে বইটার প্রতি আগ্রহী করেছিল :
প্রথম বাংলা ফ্যান্টাসি যেটায় ম্যাপ যোগ হয়েছে। হাই-এপিক ফ্যান্টাসি জনরা।
এমন একজন লেখকের হাত দিয়ে এসেছে যিনি ডেব্যুতেই মাত করে দিয়েছিলেন (প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়, সাইফাই, প্রকাশকাল ২০১৮)। বইটার নির্মাণ খুবই ভাল লেগেছিল, তাই যখন জানতে পারলাম তানজিরুল ইসলাম এবার ফ্যান্টাসি লিখছেন, প্রকাশের মাসখানেক আগে থেকে অস্তিরতার শেষ ছিল না!
এবং ইলাস্ট্রেশন। প্রচ্ছদ করেছেন ইশমাম, তাতে টাইপোগ্রাফি আবার লর্ড জুলিয়ানের, তার ওপর ভেতরে ইলাস্ট্রেশন করেছেন নূর-ম্যান! একেবারে আরমাডা নেমে গেছে বইটার জন্য!

অল্প কথায় দাবনিশ আখ্যান :
- লেখক যেখানে যেয়ে আমার আগ্রহ জাগাতে পেরেছেন, সেখানে বই শেষ হয়ে গেছে। যেভাবে শুরু করেছিলেন ওই দৌড়ে বাকিটাও চললে খুব ভাল হতো।
- ম্যাপ আছে, লিজেন্ড নেই। ঘটনাপ্রবাহের সাথে ম্যাপ মেলানোর মজা-টা মিস করেছি। ম্যাপ দেওয়াটাই সার।
- ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং ভালো। জীবনযাপনের খুঁটিনাটি এসে পড়েছে, আরো অনেকদূর দেখা বাকি।
- টার্গেট অডিয়েন্স যে কারা, এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান। বাচ্চাদের জন্য তুলে রাখতাম, একটা সিকোয়েন্স তা নাকচ করতে বাধ্য করেছে।
- ইলাস্ট্রেশন মুগ্ধ করেছে!
- ম্যাজিক সিস্টেমও চমৎকার। তাম্বুলের নিয়ম-কানুন বেঁধে দিলে দুর্দান্ত হবে। (যদি হার্ড ম্যাজিক আনতে চায় আরকি লেখক)।

বিস্তারিত মন্তব্য :

শুরুর কথা, আড়াইশ পেইজের বইয়ের পয়লা দেড়শ পেইজ পড়েছি একটানা। বাকিটা এক সপ্তায়।

শুরুর দৃশ্যেই লেখক পক্ষ-বিপক্ষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, একশন শুরু হয়ে গেছে, ভূমিরূপের আপাত ধারণা দেওয়া হয়ে গেছে তক্ষুনি। চমৎকার গতি নিয়ে শুরু হওয়া গল্পটায়, প্রটাগনিস্ট ইব্রারের চরিত্রকে আমরা চিনতে পারি কমবেশি। বাকপটু, নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন, আবার খানিকটা অপ্রাপ্তবয়স্ক-ও। সবসময় এগিয়ে যেয়ে লড়াই করা আর ঝুঁকি নেওয়া যেমন তার স্বভাব, তেমন বিপদের আঁচ পাওয়ার ঘাটতিও চোখে পড়েছে কমবেশি। সর্বোপরি মনে হয়েছে, ইব্রার তার সেরা-টায় এখনো পৌঁছেনি, তার ডেভেলপমেন্ট এখনো অনেকাংশে বাকি আছে। ন্যারেটিভে তাকে বারবার 'ছেলেটা' বলে নির্দেশ করাটাও এটাই মনে করিয়েছে, ইব্রার এখনো অপক্ব।

ওয়ার্ল্ড বিল্ডিঙের বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের চেনা পৃথিবীর অনেকটাই সদৃশ, কিন্তু যেন একটা প্রতিচ্ছবি, এটা উপভোগ করেছি। এক জায়গায় রক-পেপার-সিজার খেলার অনুরূপ খেলা দেখানো হয়েছে, আবার অন্যখানে আমাদের পৃথিবীর আমাদের চেনা ফলমূল-কে দেখানো হয়েছে অন্য দুনিয়ার অচেনা খাবার হিসেবে। লেখক বিভিন্ন উদ্ভিদের পরিচয় দিয়েছেন, কোনোটা থেকে পানীয় আসে, কোনোটা ঐষধ, কোনোটা তেল দেয়। তাদের দুনিয়ায় ইতিহাস শেখার জন্য নাট্যশালা আছে, ইতিহাস শোনার জন্য গল্পকাররা আছেন গল্প বলতে। পাঁচশো লোকের আবাসভূমিতেও এদের স্থান আছে যখন, তাদের গুরুত্বটা বুঝাই যায়!

ম্যাজিক সিস্টেমের পরিচয় এসেছে অনেকটা পরে এসে। তাও এই সিস্টেমের ওপর বেশিকিছু নির্ভর করেনি, তবে বুঝতে পেরেছি এই দুনিয়ায় অভাবিত ব্যাপারগুলো এই এক প্রকারের ম্যাজিকের দ্বারাই ঘটে, তাই লেখক হয়তো পরের বইগুলোয় তার বিস্তারিত লিখবেন। 'তাম্বুলক্রিয়া' নামের এই ম্যাজিক করে একটা নির্দিষ্ট জাতি, যাদের প্রতি অন্যান্য জাতিও মুখাপেক্ষী। একমাত্র ম্যাজিক সিস্টেম, সেটা হার্ড ম্যাজিক হলে খুব চমৎকার লাগবে যেহেতু বাংলা ফ্যান্টাসিতে এখনো হার্ড ম্যাজিক দেখা যায়নি।

কিছু জায়গায় সংলাপ পড়ে মনে হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের ফ্যান্টাসি পড়ছি না, বাচ্চাদের বই পড়ছি। কিন্তু দাবনিশ আখ্যান অবশ্যই বাচ্চাদের উপযুক্ত না। এমনটা একই লেখকের আগের বইয়ে ঘটেনি। এছাড়াও আমার মনে হয়েছে, কিছু লেখকের উচিৎ রোমান্টিসিজম বা ইমোশনালিটি পরিহার করা। বাচ্চাবাচ্চা আবেগী চিন্তাভাবনা বিরক্তি আনে :3


( এই অংশটুকুতে স্পয়লার পেতে পারেন। বই পড়া না থাকলে শেষ প্যারায় চলে যান।)

- আসমাইন, অস্পৃশ, অস্তার, তাম্বুলক্রিয়ক। জাতিগুলোর নিজস্বতা খুব ভূমিকা রাখবে সামনে। বিশেষত, অস্পৃশ!
- অনেক প্রশ্ন আর খটকা জমে গেছে। হয়তো লেখকের কাছেও এগুলোর উত্তর নেই, লেখকও এই ব্যাপারগুলোকে কোনোকিছু ভেবে লিখেননি, হয়তো কাহিনীতে ভূমিকা রাখেনা ব্যাপারগুলো, এটা ভেবে হতাশ লাগছে। এই যেমন, একটা দ্বীপ, তার একটা শাসন-সভা আছে, অথচ সৈন্যবাহিনী বা আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা নেই। আগে ছিল না।
- পোকাদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধকৌশল নেই, শুধু মুখোমুখি সংঘাত আছে। তীর-ধনুকের উল্লেখ একটা ইলাস্ট্রেশনে দেখতে পেলেও, তীরের ব্যবহার কোথাও করা হয়নি। ঢাল-বল্লম-বর্ম নাই, যুদ্ধকৌশল নাই আগেই বলেছি। এমন একটা সৈন্যদল গড়ে তুলে সেটাকে কেবল ওয়ান-টু-ওয়ান কমব্যাটে ব্যবহার করা, কেন? কোন সমরনায়ক এটা করাবে?
- আর হ্যাঁ, স্বাভাবিক কারণেই দ্বীপে রাত-নির্ভর জীবনযাপন ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কথা, যেহেতু পোকা শুধু দিনেই আক্রমণ করে। কিন্তু তার বদলে সবার দিন-নির্ভর জীবনব্যবস্থা গ্রহণ একটু খটকা জাগায়।
- আর সবচে আক্ষেপের জায়গা, ম্যাপটা কোনো কাজেই লাগেনি। ম্যাপদুটো স্রেফ ছবির কাজ করেছে, কোথায় কোনটা কি, কোথায় কি ঘটেছে, এগুলো মিলিয়ে দেখার জন্য কোনো নির্দেশক যোগ করা হয়নি ম্যাপে।


সামনেই আরো কিছু ফ্যান্টাসি বই আসছে। লর্ড জুলিয়ানের 'আশিয়ানি' আসছে, আল কাফি নয়নের 'রাজকীয় উৎসর্গ' আসছে। ম্যাপের এই দুর্বলতাটা আশা করি নয়ন ভাইয়ের বইয়ে ঘটবে না, কেননা ইতিমধ্যে প্রকাশিত ছবিতে দেখেছি, স্থানগুলো নামাঙ্কিত করেছেন তিনি। এমনকি সিদ্দীক আহমেদ-ও ফ্যান্টাসি লেখায় নামছেন, এটা অবশ্যই দারুণ খবর আমাদের জন্য!
দাবনিশের মতো বই আরো আসুক, দাবনিশকে ছাপিয়ে যাক, আর দাবনিশের পরের বইগুলো যেন এবারের চেয়ে সমৃদ্ধ হয়, এটুকু চাও নিয়ে পরের বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম।
More...